ডেস্ক রিপোর্ট: ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রাণীদেহে টিকে থাকার জন্য যে কোন ভাইরাসই কিছুদিন পরপরই তার রূপ পরিবর্তন করে। ভাইরাসের এরূপ পরিবর্তনকে জীব বিজ্ঞানের ভাষায় মিউটেশন বলা হয়। সাধারণত বাৎসরিক যে সর্দি-কাশি দেখা দেয়, সেই ভাইরাসগুলোও প্রতিবছরই নিজেদের অসংখ্যবার পরিবর্তিত করে।
সুতরাং করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তন কিংবা মিউটেশনে বিজ্ঞানীরা খুব বেশি আশ্চর্য হননি। চীনের উহানে প্রথম দিকে পাওয়া ভাইরাসের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে এর মধ্যে ভাইরাসটি অসংখ্যবার পরিবর্তিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন যে স্ট্রেইনটি দেখা দিয়েছে সেটার কারণে জনগণ এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু এই উদ্বেগের কারণ কি?
ধারণা করা হচ্ছে, করোনার নতুন এই স্ট্রেইনটি আগেরগুলোর তুলনায় বেশি মরণঘাতী নয়। কিন্তু যে বিষয়টি মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে সেটি হল: আগের তুলনায় করোনার নতুন স্ট্রেইনটি ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। যার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পরছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই স্ট্রেইনটিতে এখন পর্যন্ত ২৩ ধরনের পরিবর্তন তাঁরা দেখতে পেয়েছেন।
করোনার নতুন স্ট্রেইনটি সংক্রমণ করলে কি নতুন ধরনের কোন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে? এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নতুন এই স্ট্রেইনে সংক্রমিত হলে আগের মতই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা, ধারাবাহিক শুষ্ক কাশি নতুন এই স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও প্রধান লক্ষণ। এছাড়া স্বাদ এবং গন্ধেও পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
করোনার নতুন এই মিউটেশনটির নামকরণ করা হয়েছে ভিইউআই-২০২০১২/০১. ধারণা করা হচ্ছে মধ্য সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে, রাজধানী লন্ডন কিংবা কেন্ট কাউন্টিতে করোনার নতুন এই মিউটেশন ঘটেছে।
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা সুসান হপকিন্স জানান, তাঁরা নতুন এই স্ট্রেইনটি সম্পর্কে ডিসেম্বরের ১৮ তারিখেই সরকারকে জানান। একইদিনে ভাইরাসটির নতুন ধরণ সম্পর্কে পাওয়া সব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে ইংল্যান্ড।
তখন থেকেই নতুন এই স্ট্রেইনটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে দ্রুত ছড়াতে থাকে। এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই নতুন এই স্ট্রেইনটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ডিসেম্বরের ৯ তারিখে করোনায় আক্রান্ত ৬২ ভাগই নতুন স্ট্রেইনে সংক্রমিত হয়েছেন। যা তিন সপ্তাহ আগেও ছিলো মাত্র ২৮ ভাগ।
যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হুইটি জানান, বর্তমানে প্রচলিত সোয়াব টেস্টের মাধ্যমেই নতুন স্ত্রেইনটি শনাক্ত করা সম্ভব।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালান্স বলেন, করোনার নতুন এই স্ট্রেইনটি অন্য দেশেও থাকতে পারে। তবে এর বিস্তার সম্ভবত যুক্তরাজ্য থেকেও শুরু হয়েছে।
করোনাভাইরাসের নতুন এই প্রকরণের বিরুদ্ধেও ভ্যাকসিন কার্যকর থাকবে বলে এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে।
ভাইরাসের এত দ্রুত বিস্তারের কারণে যুক্তরাজ্য চতুর্থ মাত্রার লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এতিই যুক্তরাজ্যে লকডাউনের সর্বোচ্চ মাত্রা। লকডাউন চলাকালে সরকার অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা ছাড়া জনগণকে ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করেছে। যদিও এর আগে দেশবাসীকে ক্রিসমাস উৎসব পালন করতে অনুমতি দিয়েছিলো বরিস জনসনের সরকার। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাও বাড়তে থাকে। সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাদের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে।
আল জাজিরা