পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অজপাড়া গায়ের আব্দুল আজিজের ছেলে সাহেব আলী। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। মুক্তযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য বানাতে গিয়ে ছেড়ে গেছেন প্রথম স্ত্রী হনুফা। এরপরও ছাড়েননি ভাস্কর্য বানানোর কাজ। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করতে ইতিমধ্যে এই রাজমিস্ত্রি ৬৬টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য বানিয়েছেন।
পাননি কোনো অনুদান, নিজের বসত-ভিটা বিক্রি করে নিরক্ষর এই মানুষটি মহৎকর্ম সম্পাদন করে চলেছেন। আরও পাঁচটি ভাস্কর্য নির্মাণাধীন, তবে তার জন্যে প্রয়োজন অর্থ। তার এ হস্তশিল্প দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসেন তার গ্রামের বাড়িতে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩০ শতক জমির ১৭ শতক জমি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দীর্ঘ এক বছর ধরে ৬৬টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন তিনি। এর জন্যে তার এনজিও থেকেও ঋণ নিতে হয়েছে।
পুরোনো টিন দিয়ে শেড বানিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ারা বেগমকে নিয়ে তার সংসার। ছেলে হাসান ও হোসেন এবং মেয়ে নিলীমা ও নিলুফাকে নিয়ে সাতান্ন বছরে পা দিয়েছেন সাহেব আলী। এক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী।
টিনের ঘরটুকু ছাড়া বাকি জায়গায় প্রদর্শন করা হয়েছে- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বজ্রমুষ্ঠি, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ আঙ্গুলে প্রদর্শন করা হয়েছে গোটা বাংলাদেশ, বীর যোদ্ধার পদদলিত (পাক বাহিনী) কাল নাগ, ১৫ আগস্টের ভয়াবহ বুলেট, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ৫২-এর ভাষা আন্দলোনসহ মোট ৬৬টি ভাস্কর্য।
১৯৯৬ সালে মুন্সিগঞ্জের একটি চালের মিলে কর্মরত ছিলেন তিনি। তখন সহকর্মী বীরাঙ্গনা রাহিমার কাছে একাত্তরের সমাজ-সভ্যতা বিবর্জিত কাহিনি শুনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য বানাতে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। কখনো অর্ধাহারে থেকেছেন, কখনোবা অনাহারে দিন পার করেছেন কিন্তু ভাস্কর্য বানানোর কাজ বাদ দেননি।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চরম শঙ্কায় থাকেন তিনি। সরকারি অথবা কোনো দাতা সংস্থা শিল্পকর্মকে সহায়তা দিলে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার অজানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে বলে দাবি সাহেব আলীর।
তিনি জানান, প্রথমে ভাস্কর্য বানানোর কাজ শুরু করলে সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়। প্রথম স্ত্রী হনুফা পাগল বলে তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির অভিমুখে কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি, স্বাধীনতার চিত্রপট এবং একাত্তরের অবিস্মরণীর তাৎপর্য নিয়ে ২০টি প্ল্যাকার্ড। এছাড়া প্রদর্শন করা হয়েছে নাগরিক সচেতনতামূলক কিছু বাক্য।
নিরক্ষর এই মানুষের হাতের নিপুন ছোঁয়ায় যেন ফুটে উঠেছে গোটা বাঙালি জাতির কৃতিত্ব এবং স্বাধীনতার সেই রক্তস্নাত স্মৃতি।