শৈশবে একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ’। কথাটার আবারও অকাট্য প্রমাণ পেলাম ‘শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে বেসরকারি খাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২০’ পুরস্কার জেতার পর। করোনাকালে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবাদানের জন্যই এই প্রাপ্তি। ‘অসম্ভব’ এই যুদ্ধজয়টা সম্ভব হয়েছে, শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের পরিশ্রমী কর্মীদের জন্য। তারা ছাড়া কোনভাবেই এটা সম্ভব ছিল না।
করোনার শুরুতে সবাই যখন আতঙ্কগ্রস্ত, কর্মীদের থেকে তখন প্রস্তাব এলো একটি টিম অফিসে থেকে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। বাকী কর্মীরাও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করবে। মহামারিকালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বন্ধ হওয়ার পথে, তখন কর্মীদের এমন আন্তরিক উদ্যোগে আমি অভিভূত হই। চোখে জল চলে আসে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা সেদিন আমাকে প্রচণ্ডভাবে তাড়িত করে। সিদ্ধান্ত নিই, পরিবার ছেড়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গেই থাকবো। একদম তাদের মতো করে। থেকেছিও।
সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম, অফিসে ৬০ জনের একটি দক্ষ-কর্মঠ টিমকে আগলে রাখার। ব্যবস্থা করেছিলাম থাকা-খাওয়ার। জানি বাসার মত করে তাদের ‘ভালো’ রাখতে পারিনি। তবে নিজের ‘পরিবার’র মতো করে চেষ্টা করেছিলাম সর্বোচ্চ ভালোটাই রাখতে। তিনবেলা খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি পবিত্র মাহে রমজানে ব্যবস্থা করেছি ইফতারেরও। একটা ভালো লাগার বিষয় কি জানেন, তারা কখনোই খাওয়ার বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং মনোযোগ দিয়েছেন কাজে। নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা না মেনেই করেছেন নিরলস পরিশ্রম। বাসা থেকেও যারা কাজ করেছেন, যুক্ত থেকেছেন সার্বক্ষণিক অনলাইনে-সেই দুইশত জন কর্মীদের সঙ্গেও চেষ্টা করেছি যুক্ত থাকতে। প্রয়োজন মতো দিয়েছি দিকনির্দেশনাও।
কর্মীদের এমন প্রয়াস দেখে, আশায় বুক বেঁধেছিলাম। তাদের মতো করে ফ্লোরে শুয়ে ভেবেছিলাম, আল্লাহ নিশ্চয়ই এর ফল দেবেন। আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই। মহামারি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের প্রিয় স্বদেশ। লাল-সবুজ পতাকা হাতে পুনরায় মানুষ হাঁটবে-দৌঁড়াবে। গাইবে বিজয়েরই গান।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের আর্জি শুনেছেন। করোনা মহামারি পুরোপুরিভাবে না কাটলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে দেশ আজ সুরক্ষিত। স্বাস্থ্য খাত, পুলিশি সেবা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কৃষকও সরকারের পাশাপাশি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে।
এই অগ্রযাত্রায় মানুষের সেবা যাতে অব্যাহত থাকে, দেশ থেমে না থেকে এগিয়ে যায়-সেই জায়গা থেকে আইসিটি খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠান ‘ফিফোটেক’ শুধু চেষ্টা করেছে ‘সেরা’টা দিতে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ভাই সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন। বলেছেন, ‘না’ বলে অভিধানে কোন শব্দ নেই। আপনারা পারবেনই। হ্যাঁ, তাঁর কথাই সত্য হলো। সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় তাই জাতীয় পর্যায়ে বেসরকারি খাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২০’ পুরস্কারের ‘শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান’র স্বীকৃতি পেলো ‘ফিফোটেক’।
এই অর্জন আমার নয়, কোনক্রমেই নয়। এই অর্জন আমার প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর। এই জয় তাদের। তাদের জন্যই আমি তৌহিদ হোসেন। তারাই আমার প্রাণ। তারাই শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা মহান সৃষ্টিকর্তা ও ফিফোটেকের সোনার টুকরো কর্মীদের প্রতি।
সবাই আমার ও আমার টিমের জন্য দোয়া করবেন। পাথেয় হিসেবে আপনাদের দোয়াই আমাদের এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে। সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় আজ তবে এ পর্যন্তই। হয়তো বিধাতা চাইলে কাঁচা হাতে আবারও দু’কলম লিখবো, কোন এক বিজয় উপাখ্যান।
লেখক: তৌহিদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, ফিফোটেক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) ; সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেরা বাংলা ৬৪